কলকাতার গুপ্ত কথা(ধারাবাহিক)

কলকাতা বিক্রির গল্প

সাবর্ণ রায় চৌধুরীর বাড়ি বর্তমানে

প্রিয়াঙ্কা সিংহ: বড়িশার সবর্ণ চৌধুরীরা ছিলেন অত্যন্ত প্রাচীন পরিবার। আগেই বলে রাখি, এই পরিবারের কারোর নামই ‘সাবর্ণ’ ছিল না। লোকশ্রুতি এই যে, এই পরিবারের সকলের গায়ের রঙ ছিল ধবধবে ফর্সা। এই কারণে তাদের ‘সাবর্ণ’ বলা হত। এঁরা ছিলেন ব্রাহ্মণ বংশের। কলকাতা,সুতানুটি ও গোবিন্দপুর ছিল এঁদের জমিদারি। আর বর্তমান লালবাজার এলাকায় ছিল এদের সেরেস্তা। দোলের দিন ওই অঞ্চলে গিয়ে তাঁরা এত পরিমাণে রং খেলতেন যে বর্তমানের লালদীঘির জল আবীরে লাল হয়ে যেত।

বাংলার নবাবের সেরেস্তার কৌতূহলী কর্মচারীরা বাদশাহের দরবারে ইংরেজদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখছিল। এরাই এসে সাবর্ণ চৌধুরীদের সেরেস্তায় খবর পাঠিয়ে দেন যে ওই তিন গ্রাম কিনবার জন্য ইংরেজরা বাদশাহের কাছে দরবার করছে এবং নবাবের অভিমত ইংরেজদের প্রতি অনুকূল নয়। এবার ইংরেজরা গেলেন সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছে। তারা তো ইতিমধ্যে সব খবরই পেয়েছিলেন। নবাবের মন বোঝা তখন ছিল তাদের কাছে জরুরি এবং এর একটি মাত্র পথ খোলা আছে। তা হল সময় নিয়ে অপেক্ষা করা। তাঁরা বললেন ফরমানে দেওয়ানের সই নেই। অতএব ওয়ালশ সাহেবকে পুনরায় পাঠানো হল নবাবের কাছে।

এই থাম গুলির অভ্যন্তরে ছিল একটি উঠোন। এখানেই কলিকাতা বিক্রির দলিল সম্পাদন করা হয়

বেশ কিছু সময় নেওয়ার পর স্বাক্ষর মিলল। ১৬৯৮ সালে ৯ই নভেম্বর দলিল দস্তাবেজ সম্পাদিত হল। বিক্রয় মূল্য ছিল ১৩০০ টাকা। কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর বিক্রি হয়ে গেল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে।

কী ভাবে বিক্রি হল সে এক বিচিত্র কাহিনী! প্রথমে বিক্রির বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা ভালো।সেই সময়ে মানুষ, বাড়িঘর,জমিদারিও ছিল ভিন্ন জাতের একটি পন্য।জমিদারি ক্রয়ের অর্থ সেই অঞ্চলে প্রজা বসানোর অধিকার। জমিদার সেখানকার করের অংশ খাজনাস্বরূপ পাঠাতেন বাদশাহকে। আর তার বহুগুণ অধিক আদায় করতেন সাবর্ণ চৌধুরী নিজে। এটি ছিল তাদের মুনাফা। এইভাবে জমিদারি ক্রয় বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে এটি হয়ে উঠেছিলো একটি পন্য বিশেষ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ঠিক এই ভাবে উপরিউক্ত তিনটি গ্রাম কিনেছিল। সুতরাং একই ভাবে তিনটি গ্রাম কেনার অর্থও দাঁড়ালো ওই তিনটি গ্রাম থেকে প্রাপ্ত করের অংশ ভোগ করা, কিন্তু ওই অঞ্চলের জমিজমার মালিক হওয়া নয়। জমিদারি বিক্রির জন্য নবাবের অনুমতি প্রয়োজন হত। বর্তমানে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের জনৈক সদস্য দাবি করেন, ১৩০০ টাকার বিনিময়ে ইংরেজের হাতে শুধুমাত্র ওই তিনটি গ্রামের প্রজাসত্ত্ব (Right to rent) দেওয়া হয়েছিল। বিক্রি তো নয়, এমনকি জমিদারিসত্ত্বও দেওয়া হয় নি।

(লেখিকার সঙ্গে যোগাযোগ করুন- priyanka.singha1811@gmail.com)

‘কলকাতার গুপ্তকথা’র আগের পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন-https://agamikalarab.com/2019/12/07/

One thought on “কলকাতার গুপ্ত কথা(ধারাবাহিক)

Leave a comment