
অর্জুন জানা, আগামী কলরব: ‘ইস! আগে জানলে একটা status দেওয়া যেত। লোকে জানত আমি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কত ভালো ভাবে মনে রেখেছি। Lockdown এর বাজারে সবাই যখন সারাক্ষণ mobile ঘাটছে, তখন তো নিশ্চয়ই সবাই দেখত।‘
আমাদের চিন্তা ঠিক এমনই। তাই এই মহান দেশপ্রেমিককে আমরা ভুলে গেছি। যাঁর প্রচেষ্টা ও সুভাষচন্দ্রের সুদক্ষ নেতৃত্বে আমরা আজ স্বাধীন। তাঁর জন্মদিনের শুভ সময়ে তাঁর উদ্দেশ্যে এই ছোট্ট লেখা। যদিও তাঁর কর্মকাণ্ড এই ছোট্ট লেখায় বলা অসম্ভব।
আমরা ব্যোমকেশের গল্পে পড়েছি, আবার ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমাতেও দেখেছি কি নিপুণ ছদ্মবেশ এই গোয়েন্দারা নিতে পারেন। কিন্তু গল্পের বাইরে এমন লোক পাওয়া খুব মুশকিল যাদের ছদ্মবেশে দেখে তাদের পরিবারের লোক অন্তত চিনতে পারবেন না। তবে এই বঙ্গভূমিতে এমন লোকও ছিলেন, যাঁর ছদ্মবেশ ধরতে পারে এমন গোয়েন্দা দুঁদে ব্রিটিশের ছিল না!
বাল্য জীবন
দিনটা ১৮৮৬র ২৫শে মে। তৎকালীন পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে জন্ম নেন বিনোদবিহারী বসু ও ভুবনেশ্বরী দেবীর সন্তান। রাসবিহারী, নামটা দিয়েছিলেন তাঁর দাদু কালীচরণ বসু। রাসবিহারী বসুর মা যখন গর্ভবতী তখন তাঁর অসুস্থ শরীরের জন্য গ্রামের পশ্চিম পাড়ার বিষ্ণু মন্দিরে মানত করা হয় সুস্থভাবে সন্তানের জন্মের জন্য, তাই পরে দাদু কৃষ্ণের নামে নাম দেন রাসবিহারী। প্রথমে গ্রামের পাঠশালা পরে মর্টন স্কুল ও ডুপ্লে কলেজ থেকে নিজের পড়াশুনা শেষ করেন রাসবিহারী। ছোটবেলা থেকেই ছিল লাঠি খেলার অভ্যাস ও জাতীয়তাবাদী চিন্তা। এমনও শোনা যায়, ইংরেজদের মূর্তি তৈরি করে লাঠি খেলার ছলে তিনি সেইগুলি ভেঙে ফেলতেন। বাল্যাবস্থাতেই দাদু কালীচরণ বসু এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় তাঁর মনে জেগে ওঠে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য বিপ্লবী চিন্তাধারা।
ভারতে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড
প্রথম জীবনে নানান বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। ১৯০৮ সালে আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে শেষে বাংলা ছেড়ে চলে যান দেরাদুনে। সেখানে বন গবেষণা সংস্থায় হেড ক্লার্ক পদে কাজ করতে শুরু করেন। সেখানে তাঁর সাথে যোগাযোগ হয় যুগান্তর দলের অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও আর্য সমাজের বিপ্লবীদের। ১৯১২ সালের ২৩শে ডিসেম্বর, ভারতবর্ষের সদ্য স্থাপিত রাজধানী দিল্লীতে স্বাগত জানান হচ্ছে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জকে। চাঁদনীচকের এক বাড়িতে একজন রোগা মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভাইসরয়কে দেখবার জন্য। হঠাৎ বোমার শব্দে কেঁপে উঠল রাস্তা। ১৬ বছর বয়সী বসন্ত বিশ্বাস মহিলার ছদ্মবেশে বোমা ছুঁড়েছিলেন হাতিতে বসা লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন হার্ডিঞ্জ, তবে জখম এড়াতে পারেননি। এই হামলার পরিকল্পনা করেন রাসবিহারী বসু। এরপর চলে রাসবিহারী ও পুলিশের ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অনেকে বলেন যখন তাঁর ওপর এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, তখন নাকি তিনি পুলিশের চিফ কমিশনারের ঠিক উল্টো দিকে বসে ট্রেনে সফর করেছিলেন। রাসবিহারী গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন সারা ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা সংগ্রাম। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সেই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৯১৫ সালের ১২ই মে কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাপানি জাহাজ ‘সানুকি-মারু’-তে করে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করেন তাঁকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে। ছদ্মবেশের জাদুকর রাসবিহারী বসু আগেই জাল পাসপোর্ট তৈরি করে রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় রাজা প্রিয়নাথ ঠাকুর ছদ্মনামে।
জাপানে রাসবিহারী

জাপানে এসেই তাঁর সাক্ষাৎ হয় পাঞ্জাবের বিপ্লবী ভগবান সিংয়ের সঙ্গে। তারপর তিনি দেখা করেন বিখ্যাত চৈনিক জাতীয়তাবাদী নেতা সান-ইয়াত সেনের সাথে। সান-ইয়াত রাসবিহারীকে তাঁর গুরু তোয়ামা মিৎসুরুর সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন। এর কয়েক মাস পর তাঁর সাথে পরিচয় হয় আরও এক দুর্দান্ত বিপ্লবী হেরম্বলাল গুপ্তের। গুরু সর্বদাই সর্বস্থানে শিষ্যদের রক্ষা করেন। রাসবিহারী ও হেরম্বলালকে জাপানি পুলিশদের হাত থেকে সবসময়ই রক্ষা করেছিলেন গুরু তোয়ামা মিৎসুরু। ধীরে ধীরে রাসবিহারী বসু গড়ে তোলেন তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের দল। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন বহু আদর্শবান জাপানি, সামরিক কর্তা ও বুদ্ধিজীবীগণ। সেই সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু উল্লেখ্য হলেন কুজো ইয়োশিহাসা, উচিতা রিয়োহেই, ওওকাওয়া শুমেই, সুগিয়ামা শিগেমারু, শিমোনাকা ইয়াসাবুরো এবং আরও অনেকে। রাসবিহারী বসুর জাপান আগমনের কয়েক মাস পরেই জাপান সফরে আসেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মহান বিপ্লবী লালা লাজপত রায়। তাঁর আগমনে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করতে চাইছিলেন রাসবিহারী, যাতে জাপানি নাগরিকরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন। এরমধ্যেই হেরম্বলাল তৎকালীন প্রখ্যাত প্যান-এশিয়ানিস্ট এবং ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রের গবেষক ওওকাওয়া শুমেই এর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। তাঁরই পরামর্শে টোকিওর উয়েনো শহরের বিখ্যাত সেইয়োকেন মিলনায়তনে তাইশো সম্রাট ইয়োশিহিতোর সিংহাসন আরোহণকে কেন্দ্র করে একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেই সভায় ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে রক্ত গরম করা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন লালা লাজপত রায়, রাসবিহারী বসু ও হেরম্বলাল গুপ্ত। তোয়ামা মিৎসুরু এবং আরও অনেকে বক্তৃতা দেন সেই সভায়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্রিটিশ গুপ্তচরদের প্রেরিত সংবাদ পেয়ে ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে বিপ্লবীদের ধরিয়ে দেবার জন্য জাপানকে চাপ দেয়া হয়। ফলে জাপান সরকার বিপ্লবীদের জাপান ত্যাগের নির্দেশ জারি করে। লালা লাজপত রায় চলে যান আমেরিকাতে। রাসবিহারী ও হেরম্বলালকে গুরু তোয়ামা আশ্রয় দেন। তাঁদের দুজনকে গুরু তোয়ামা নিজের বাড়ির কাছেই সিনজুকু শহরে অবস্থিত সুবিখ্যাত ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘নাকামুরায়া’র মালিক সোমা আইজোর সাথে আলাপ করে সেই প্রতিষ্ঠানের একটি পরিত্যক্ত ছবি আঁকার স্টুডিওতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিছুদিন পর হেরম্বলাল সেই জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় যান ও মাসচারেক পর আমেরিকা চলে যান। থেকে যান রাসবিহারী একা। তবে তাঁর সেই একাকিত্ব কাটাতে নিজেকে এগিয়ে দেন এক মাতৃময়ী দেশপ্রেমিকা, যিনি নিজের দেশ ছাড়াও ভালোবেসেছিলেন ভারতবর্ষকে, আপন করেছিলেন বঙ্গসন্তান, বঙ্গসংস্কৃতি ও বঙ্গরন্ধনকেও।
দাম্পত্য জীবন

পরিত্যক্ত স্টুডিওতে গা ঢাকা দিয়ে আছেন রাসবিহারী, এদিকে চিন্তিত হয়েছেন গুরু তোয়ামা। শেষপর্যন্ত গুরু তোয়ামা সোমা আইজোকে তার বড় মেয়ে তোশিকোর সাথে রাসবিহারীর বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ে হলে জাপানি নাগরিকত্ব পেতে সুবিধা হবে রাসবিহারী বসুর। অকস্মাৎ এই প্রস্তাবে চমকে যান সোমা আইজো ও তাঁর স্ত্রী কোকো আইজো। মেয়েকে এই বিয়ের প্রস্তাব ও বিয়ের ফলে যা যা সমস্যা হতে পারে সব বললেন কোকো। তোশিকো চেয়েছিলেন কিছুটা সময়, চিন্তা করবার জন্য। তিন সপ্তাহ পরে তোশিকো জানান যে তিনি রাজি আছেন। এদিকে রাসবিহারীকে তাঁর মতামত চাইলে তিনি বলেন, “বিপ্লব আমার ধ্যানজ্ঞান। বিয়ের কথা কখনও ভাবিনি। আমার যা জীবন তাতে এসব ভাবার কথাও না। তবে মিস্টার তোয়ামা যদি এটাই চান এবং মিস তোশিকো যদি রাজি থাকেন তা হলে আমি বিয়ে করবো”। ১৯১৮ সালের ৯ই জুলাই অতিগোপনে তোশিকো-রাসবিহারীর বিয়ে হয় টোকিওতে। বিয়ের পর শিবা অঞ্চলে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন দম্পতি। কিন্তু কিছুদিনেই টের পেয়ে যায় গোয়েন্দারা। শুরু হলো বাড়ি বদল। শাশুড়ি কোকোর ডায়রি থেকে জানা যায় ৮ বছরে মোট ১৭ বার বাড়ি বদল করেন দুইজনে। বিয়ের পর প্রায়ই রাসবিহারীর মনে হতো এই বিয়ে বুঝি জোর করে হয়েছে, তোশিকো এতে খুশি নন। তাই একদিন এই প্রশ্নটা করেই ফেললেন তোশিকোকে যে তিনি কি সত্যিই রাসবিহারীকে ভালোবাসেন ? তাঁর জন্য প্রাণ দিতে পারেন ? প্রশ্ন শুনেই তোশিকো ছুটে যান জানালার দিকে, পাহাড়ের উপত্যকায় ঝাঁপ দিয়ে নিজের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে, পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরেন রাসবিহারী। তারপর থেকে কোনোদিন তাঁদের মধ্যে এই প্রশ্ন ফিরে আসেনি। ১৯২০ তে জন্ম নেয় তাঁদের পুত্র মাসাহিদে যিনি মাত্র ২৪ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ হারান। এর দু বছর পর ১৯২২ সালে তাদের কন্যা তেৎসুকো জন্মগ্রহণ করে। ১৯২৩ সালে রাসবিহারী বসু জাপানের নাগরিকত্ব পান। শেষ হয় বাড়ি বদল আর লুকোচুরি। কিন্তু দাম্পত্য জীবন বেশীদিন স্থায়ী হলো না। বহু পরিশ্রম, স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার ঘরে বাস, অভুক্ত অবস্থা ও কঠিন দারিদ্রের ফলে যক্ষা রোগে ও সাথে নিউমোনিয়াতে ১৯২৭ সালে মারা যান তোশিকো। রেখে যান স্বামী ও দুই সন্তান। রাসবিহারী তাঁর স্ত্রীকে শিখিয়েছিলেন বাংলা বলতে, একেবারে বাঙালি ধাঁচে শাড়ি পরতে আর বাঙালি রান্না করতে। স্ত্রীর মৃত্যুর একবছর পর নাকামুরায়ার দ্বিতলে ‘ইন্দো নো মোন’ নামে ভারতীয় কারি রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। আজও এই রেস্টুরেন্ট জাপানে জনপ্রিয়। তিনিই প্রথম জাপানে ভারতীয় মশলায় রাঁধা মুরগির মাংসের কারি প্রচলন করেন। এই রেস্টুরেন্টই ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র।
রাসবিহারী ও আজাদ হিন্দ বাহিনী


বাঁদিকে, জাপানে সুভাষ বসুকে স্বাগত জানানোর কার্যক্রমে।(সুভাষ বসুর পিছনে)। ডানদিকে, নেতাজীর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দিচ্ছেন আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রহ্মদেশে দীর্ঘ ২২ বছর কারাদণ্ডের পর মুক্তি পেয়ে থাইল্যান্ড যান বাবা অমর সিং। সেখানে তিনি ব্যাংককে শিখ ধর্মপ্রচারক জ্ঞানী প্রীতম সিংকে মালয় ও ব্রহ্মদেশের ব্রিটিশ ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারের জন্য পাঠান। ১৯৪১ সালের ৮ই ডিসেম্বর জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তারপরের দিনই অর্থাৎ ৯ই ডিসেম্বর বাবা অমর সিংয়ের নেতৃত্বে ব্যাংককে ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪২ সালের ৯ই মার্চ লীগের সিঙ্গাপুর সম্মেলন বসে ও স্থির হয় যে সুভাষচন্দ্র বসুকে পূর্ব এশিয়াতে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণের অনুরোধ করা হবে। ২৮শে মার্চ লীগের সদস্যদের নিয়ে টোকিও সম্মেলন বসে কিন্তু এই সম্মেলনে যোগ দিতে আসার সময় জ্ঞানী প্রীতম সিং, স্বামী সত্যানন্দ ও আরও কিছু সদস্যের মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত এই সম্মেলনে লীগের কর্মপরিষদ গঠন ও রাসবিহারী বসুকে কর্মপরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি পদে নিযুক্ত করা হয়। রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে লীগের দ্রুত বিকাশ ঘটে। ১৫ই জুন ব্যাংকক সম্মেলনে প্রথম আজাদ হিন্দ ফৌজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কর্মপরিষদের হাতে আসে। লীগের সদর দপ্তর ব্যাংককে স্থাপন করা হয়। তবে এরপর লীগের সাথে কোনোরকম পরামর্শ না করেই জাপানিরা আজাদ হিন্দ ফৌজের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ শুরু করে। ফলে লীগ ও জাপানিদের দূরত্ব বেড়ে যায়। জাপানিদের এই ব্যবহার সহ্য করতে পারেননি রাসবিহারী বসু। শেষ পর্যন্ত জেনারেল মোহন সিং ও অন্যদের সাথে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় লীগ ভেঙে যায়। এরপর রাসবিহারী বসু নিজের প্রচেষ্টায় পুনরায় লীগ ও সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। লীগের দপ্তর ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৪৩ সালের ৪ঠা জুলাই রাসবিহারী বসু লীগ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার তুলে দেন সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে। ১৯৪৫ সালের ২১শে জানুয়ারি এই মহান দেশপ্রেমী, বিপ্লবী, জাতীয়তাবাদী নায়ক পরলোক গমন করেন।
জাপান সরকার রাসবিহারী বসুকে “Order of the Rising Sun” সম্মানে ভূষিত করে। তবে যে দেশের জন্য তাঁর এই জীবনের কর্মকাণ্ড, তার কাছ থেকে তিনি কিছুই পাননি। ১৯৫৭ সালে প্রথম জাপান সফরে যান তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতায় একবারও রাসবিহারী বসুর নাম আসেনি। একটি বারের জন্যও তিনি রাসবিহারী বসুর জাপানের বাড়ি ও সমাধি ক্ষেত্রে যাননি। যাঁর প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমে গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রামে অর্জিত স্বাধীনতা, সেই স্বাধীন ভারত তাঁর আত্মত্যাগের কথাকে ভুলে গেছে। যদি রাসবিহারী বসু আজাদ হিন্দ বাহিনী না গড়তেন ও সুভাষচন্দ্র বসু তাকে নেতৃত্ব না দিতেন তবে কি ১৯৪৭সালে দেশ স্বাধীন হত? স্বাধীন ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের এর উত্তরটি ভাববার অবকাশ রয়েছে।
আন্তরিক অজস্র অপার অভিনন্দন
LikeLike