
শ্রী অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকমণ্ডলীর মধ্যে শ্রী অরবিন্দ ও মায়ের জীবনী নিয়ে চর্চা করেন কিংবা শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত পাঠকও রয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র আবেদন যে, ধারাবাহিকটি পড়তে পড়তে কোনোরকম তথ্যভিত্তিক ত্রুটি চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করুন, অথবা লেখার শেষে কমেন্টেও জানাতে পারেন। এছাড়া লেখার নীচে দেওয়া লেখকের ফোন নম্বরে সরাসরি করতে পারেন যোগাযোগ। আমরা ত্রুটি মেরামতে সদা সচেষ্ট। –সম্পাদক
যোগে বিভিন্ন রূপে ভগবান
মুকুল কুমার সাহা: আমরা আমাদের শ্রী অরবিন্দকে জানবার চেষ্টা করছি। আগের পর্বগুলি পড়ে মনে হতে পারে, শ্রী অরবিন্দ কী কী বলেছেন আমরা তো এখন কিছুই জানতে পারছি না। এর উত্তরে জানাই, শ্রী অরবিন্দ যোগের সাধকরা যা যা লিখেছেন সবই শ্রী অরবিন্দের ও শ্রীমার আলোকে পাওয়া। তা ছাড়া, একদিন আশ্রম সাধক নিরোদবরণকে তাঁর যে কোনো একটা প্রশ্নের উত্তরে শ্রী অরবিন্দ বলেছিলেন,”এগুলো তো যোগের গোড়াকার কথা এসব তুমি জানো না? না বাবু, আমি যোগের অ আ ক খ তোমাকে শেখাতে পারব না।”
আমরা সাধারণ মানুষ যোগ কী তাই হয়ত ভালো করে জানি না, সেই জন্য শ্রী অরবিন্দকে জানবার আগে এবং তাঁর যোগ কী সেটা জানবার আগে প্রথমে তার সাধকদের লেখা থেকে বোঝবার চেষ্টা করছি।
আমরা আশ্রমসাধক নলিনীকান্ত গুপ্তের লেখা পড়ে জানতে পেরেছি মানুষ সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে, তারপর জেনেছি আমাদের চৈত্য সত্তাকে, সব শেষে জেনেছি চৈত্য সত্তাকে পূর্ণতা পেতে হলে অনেক জন্ম-জন্মান্তরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব যোগ সাধনা সম্পর্কে। উপনিষদ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যোগ সাধনার যোগ্যতা সকলের থাকে না। ইচ্ছা করলেই এ জীবন গ্রহণ করা যায় না। উপনিষদের ঋষি স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, “ন্যায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ“(দুর্বলের অধ্যাত্ম সাধনা বিড়ম্বনা)। আমাদের সকলের হয়ত যোগ সাধনা করবার মত যোগ্যতা নেই, কিন্তু যোগ কী এটা জানতে তো কোনো দোষ নেই, অন্তত পক্ষে যাদের মনে এ সম্বন্ধে একটুও কৌতূহল জেগেছে। তাই আমরা ‘যোগ’ কী এখন সেটা জানার চেষ্টা করছি। পরে, আমরা জানতে চেষ্টা করব বিভিন্ন ধরণের যোগ সম্পর্কে, সব শেষে জানব শ্রী অরবিন্দের পূর্ণ যোগ কী।
আগেও বলেছি এখনো বলছি, যোগ কী এই ব্যাপারে জানতে আশ্রমসাধক নলিনীকান্ত গুপ্তের রচনাবলীর অষ্টম খণ্ডের উপর নির্ভর করেই আমি লিখতে চেষ্টা করছি। আমার লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভীষণ কঠিন জিনিসকে সহজ করে সকলকে জানাতে চেষ্টা করা। জানি না আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব কী না?

অধ্যাত্মজ্ঞানীরা বলেন– মানুষের সঙ্গে ভগবানের মিলনকেই যোগ বলে। এখন মনে প্রশ্ন জাগবে, মানুষের ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ভগবান কী? মহাপুরুষেরা বলছেন, মানুষ হতে উচ্চতর বৃহত্তর একটা কিছু জাগ্রত সত্য-চৈতন্য ও আনন্দকে বুঝে নিয়ে শুরু করলেই যথেষ্ট হবে।
শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের একটা সহজ সরল কথা, “ব্রহ্ম যে কী, তা মুখে বলা যায় না।” তাঁর কথা থেকেই বোঝা যায় ভগবানকে মন বুদ্ধি দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়।
এখন মনে প্রশ্ন জাগবে, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে ভগবান সম্বন্ধে, ভগবানের রূপ সম্পর্কে বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো ধর্মগ্রন্থে ভগবানকে শুধুই নিরাকার বলা হয়েছে। কোনো ধর্মগ্রন্থে ভগবানকে সাকার সত্তা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থে ভগবানকে নিরাকার ও সাকার উভয়ই বলা হয়েছে। কোনটা ঠিক? সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের বুদ্ধি যতটা পরিণত হয়েছে তার সাহায্যে আমরা এইটুকু বুঝতে সক্ষম হব হয়ত প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত যে সব ধর্ম সম্প্রদায় এখনো টিকে রয়েছে, প্রত্যেকটি ধর্মের মধ্যেই সত্য রয়েছে, তা না হলে এই সব ধর্ম সম্প্রদায়গুলোর এতদিন টিকে থাকা কি সম্ভবপর হত!
তা হলে আমরা বেশ বুঝতে পারছি ভগবান কোথাও শুধুই নিরাকার, কোথাও শুধুই সাকার, কোথাও আবার নিরাকার এবং সাকার একইসঙ্গে। পৃথিবীর বিভিন্ন মহাপুরুষেরা ভগবানকে যে যে ভাবে অনুভব করেছেন তাঁরা সেই ভাবেই তাঁকে ব্যক্ত করেছেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের ছোট্ট বাক্যটিতে মনোযোগ দিলে এই প্রশ্ন মনে জাগবে ভগবান সাকার হতে পারেন, তিনি নিরাকার হতে পারেন, আবার একসঙ্গে সাকার ও নিরাকার উভয়ই হতে পারেন, আবার তিনি এমন কিছু হতে পারেন যা আমাদের বুদ্ধি ধারণা করতে সক্ষম নয়।
আমাদের বুদ্ধিকে এই রকম শিক্ষা দিলে হয়ত সে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে যে সত্য আছে তা খুঁজে দেখতে সচেষ্ট হবে। তা না হলে নিজেই যেটা ভালো বুঝবে সেটাকেই ঠিক বলে ভাববে, অন্যটাকে ভুল বলতে পিছপা হবে না।
(ঊনত্রিংশ পর্ব আগামী রবিবার)
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- 8584063724
২৭ম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন- https://agamikalarab.com/2020/05/26