
ঋদ্ধিমান রায়, আগামী কলরব: বিশ্বময় করোনা সংকটের করাল থাবায় বিপর্যস্ত জনজীবন। কোভিড ১৯ এ ব্যাপক হারে আক্রান্ত দেশগুলির প্রায় সবকটিতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জনজীবন ও পরিষেবা। স্তব্ধ হয়ে পড়ে যানবাহনের চাকা ও কলকারখানার ধোঁয়ার চিমনি। এরফলে করোনা-আক্রান্ত পরিবেশের মধ্যেও আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি স্বচ্ছ নির্মল শ্বাস বায়ু। আমরা দেখেছি দূষণমুক্ত নদী-সমুদ্র, ধোঁয়াশামুক্ত পাহাড়, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া লুপ্ত প্রায় পাখিদের কলকাকলি। যুগ যুগ ধরে দূষণের পাঁকে নিমজ্জিত প্রকৃতিকে আমরা দেখলাম পুনরায় ভরা যৌবন নিয়ে সেজে উঠতে। করোনার মৃত্যু-শ্বাসের মধ্যেও এ জীবনেরই দৃষ্টান্ত।
এবারের আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসটিও ছিল তাই সমগ্র বিশ্বের কাছেই এক অভিনব আবেগ উন্মাদনার দিন।
বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ চন্দ্রচূড় গোস্বামী এবং তাঁর ফ্যান ক্লাবের প্রচেষ্টায় গত ৫ই জুন থেকে ২১ জুন বিশ্ব যোগ দিবস পর্যন্ত পক্ষকাল যাবৎ অনুষ্ঠিত হল এক অভিনব ডিজিটাল চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর থিম ছিল– ‘বিশ্ব পরিবেশ ও তার সংরক্ষণ‘। বহু উদীয়মান প্রতিভাশালী শিল্পী এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটিতে বিচারক মন্ডলীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ডঃ গোপী ঘোষ এবং শ্রীমতী মিতালী মুখোপাধ্যায়।


বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্রের মধ্যে শিল্পী শীর্ষ আচার্যের চিত্রে ফুটে উঠেছে সম্প্রতি কেরালায় নৃশংস ভাবে হস্তিনী হত্যায় প্রকৃতি মায়ের রুষ্ট হওয়া এবং মানুষকে কৃতকর্মের শাস্তি দান। শিল্পী তনুষ্কা কাঞ্জিলাল দেখাতে চেয়েছেন মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক প্রভাব মানুষের ও পাখির মধ্যে। এর সঙ্গে শিল্পী প্রীতি সেনের তুলির ছোঁয়ায় অরণ্য দেবীর পৃথিবীকে রক্ষা করার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। শিল্পী শুভাশিস দত্তের থিম ছিল পাঠ্যপুস্তকে পড়া ‘একটি গাছ একটি প্রাণকে আন্তরিক ভাবে আত্মস্থ করা। অন্যদিকে শিল্পী ডঃ গোপী ঘোষ ক্যানভাসে ফুটিয়েছেন প্রকৃতি থেকে ক্রমশ বিলুপ্ত প্রায় চড়াই পাখিকে।
শ্রীমতী মিতালী মুখোপাধ্যায় প্রদর্শনীর প্রয়াসটির সাফল্য কামনা করে সমাজের জন্য বার্তা দেন– একটি চারা, একটি পৃথিবী’। পাশাপাশি অভিনন্দন জানান চন্দ্রচূড় গোস্বামীকে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার জন্য। পাশাপাশি ডঃ গোপী ঘোষের বক্তব্যের সূত্র ধরে উঠে আসে–‘জল-জমি-অরণ্য, তা বিনা জীবন শূন্য’।



পরিবেশ বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত চন্দ্রচূড় গোস্বামী
অনুষ্ঠানটির সার্থক রূপায়ণের জন্য অংশগ্রহণকারী শিল্পী-অতিথি এবং অন্যান্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি, আগামীদিনেও তাঁর ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে পরিবেশ-রক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
প্রদর্শনীটিতে অনেক উদীয়মান শিল্পী তাঁদের প্রতিভার পরিচয় রাখে। এইসব শিশু শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন– ঋষিতা বেরা, জগদীশ রায়, অর্চিস্মান সেন, সৃজনী মন্ডল, ভিবা শ্রী, দিব্যাংশু কুমার, অনন্য গৌতম, নয়নরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়, উষ্ণীষ সেনগুপ্ত, আত্রী দাস, স্নিগ্ধা গঙ্গোপাধ্যায়, আরাধ্যা, অভিরাজ ঝাঁ, দীপ্তি দুবে, মহাশ্বেতা এবং অনিমা প্রসাদ।