
শ্রী অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকমণ্ডলীর মধ্যে শ্রী অরবিন্দ ও মায়ের জীবনী নিয়ে চর্চা করেন কিংবা শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত পাঠকও রয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র আবেদন যে, ধারাবাহিকটি পড়তে পড়তে কোনোরকম তথ্যভিত্তিক ত্রুটি চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করুন, অথবা লেখার শেষে কমেন্টেও জানাতে পারেন। এছাড়া লেখার নীচে দেওয়া লেখকের ফোন নম্বরে সরাসরি করতে পারেন যোগাযোগ। আমরা ত্রুটি মেরামতে সদা সচেষ্ট। –সম্পাাদক
রাজ যোগ সম্বন্ধে ধারণা
মুকুল কুমার সাহা: হঠযোগীরা শরীর ও প্রাণকে ধরেই তাঁদের সাধনায় অগ্রসর হন। তাঁরা জানেন শরীর ও অন্তঃপুরুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বিদ্যমান, তাঁরা সর্বদাই স্থূল শরীরকে ভিত্তি করেই হঠযোগ সাধনার অনুশীলন করে চলেন।
রাজ যোগ সাধনার কেন্দ্র মন। রাজযোগীরা বলেন– মানুষের সকল চিন্তা তার বাসনা, প্রেরণা প্রভৃতি মনের যে বহুমুখী বৃত্তি সে সকলের উৎস হচ্ছে চিত্ত। মনের যে প্রতিষ্ঠা যে মূল, তাকেই চিত্ত বলে। মানুষ যা ভাবে যা করে যা বোধ করে সমস্তই উঠে আসে চিত্ত থেকে। চিত্তকে যদি বশ করা যায় তাহলেই মনের বিভিন্ন ক্রিয়া আপনাথেকেই বশ হয়ে যায়। তখন মানুষের মধ্যে যে বৃহত্তর মহত্তর সত্তা, সেই ভগবানের সেই পরম পুরুষের সাক্ষাৎ লাভ করা সম্ভব হয়। মানুষের চিত্ত সর্বদাই অস্থির, তাই তার মধ্যে পরম চৈতন্যময় সত্তাকে সে জানতে পারে না। এই চিত্ত বৃত্তিকেই শান্ত করবার জন্য, তাকেই নীরোধ করবার জন্য মানুষ যে প্রক্রিয়ায় সাধনা করে তাকেই রাজ যোগ সাধনা বলে।
হঠযোগীরা বলেন শরীর ও প্রাণের উপর মন সম্পূর্ণরূপেই নির্ভরশীল। কিন্তু প্রচলিত রাজ-যোগীরা বলেন শরীর ও প্রাণের উপর মন আংশিক নির্ভরশীল।

রাজ যোগীরা প্রথমেই জোর দেন মানসিকতার নৈতিক শুদ্ধির উপর। তাদের কাছে এই নৈতিক শুদ্ধির গুরুত্ব অসীম, এ না হলে রাজযোগের অবশিষ্ট সাধন পথ কষ্টকর, দূষিত এবং অপ্রত্যাশিত মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক বিপদে পূর্ণ হওয়া সম্ভব। এই নৈতিক শুদ্ধি সাধনকে তাঁরা দুই শ্রেণীতে ভাগ করেন– পাঁচটি ‘যম’ ও পাঁচটি ‘নিয়ম’। প্রথম শ্রেণীর (যমের) মধ্যে আছে আচরণে নৈতিক আত্মসংযমের বিধিসমূহ যেমন– সত্য কথা বলা, কারোর ক্ষতি না করা, হত্যা বা চুরি করা থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি (সত্য, অহিংসা, অস্তেয়) এই ভাবে প্রথমে শুরু করা হয়, পরে আস্তে আস্তে আত্ম সংযমের দ্বারা রাজসিক অহংভাবকে সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়।
নিয়মের অর্থ বিভিন্ন নিয়মিত অনুষ্ঠানের দ্বারা মনের শিক্ষা। এই সব অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ হল ভাগবত সত্তার ধ্যান, আর এর উদ্দেশ্য হল সাত্ত্বিক শান্ত ভাব, শুদ্ধতা ও একাগ্রতার জন্য যোগ্যতার সৃষ্টি করা।
এই ভিত্তি দৃঢ় ভাবে স্থাপিত হওয়ার পর রাজ যোগী আসন ও প্রাণায়ামের সাহায্য গ্রহণ করেন; কারণ মনকে শান্ত করা কেবল মনের দ্বারাই সম্ভব হয় না, মনের উপর শরীর ও প্রাণের অনেকখানি আধিপত্য থাকে। রাজযোগীর পক্ষে যে ভাবে বসলে মন স্থির করা সম্ভব হয়, প্রাণায়াম করা সহজ হয়, তাঁরা সেই ভাবে আসনের ব্যবস্থা করেন। (অবশ্যই মেরুদন্ড সোজা রেখে বসবার ব্যবস্থা থাকে।) মানসিক সত্তার সঙ্গে প্রাণিক ও ভৌতিক দেহের যে গ্রন্থি তা শিথিল করা এবং মানুষের চৈত্য পুরুষের মধ্য দিয়ে অতিচেতন পুরুষের সঙ্গে মিলনের পথ নির্বিঘ্ন করা রাজ যোগীর প্রাণায়ামের প্রধান উদ্দেশ্য। সুতরাং তিনি নির্দিষ্ট সেই সেই প্রাণায়ামেরই অভ্যাস করেন।
আসন ও প্রাণায়ামের ফলে চিত্ত যখন নির্মল শান্ত হয়, তখন বিষয় থেকে মন ও ইন্দ্রিয়কে প্রত্যাহিত করে একটা মাত্র জ্ঞানের মধ্যে ক্রমে ক্রমে তন্ময় হয়ে যেতে হয়। এই রূপে প্রত্যাহার ধারণা ও ধ্যানের মধ্য দিয়ে সমাধি অবস্থায় পৌঁছনো সম্ভব হয়।
রাজযোগীরা যে অষ্টাঙ্গ সাধনার অনুষ্ঠান করেন সেগুলিই হচ্ছে উপরোক্ত যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি।
রাজযোগীরা বলেন কোনো সিদ্ধ যোগীর সাহায্যে সাধক যখন সাধনা শুরু করেন তখনই তিনি এইসব ব্যাপারগুলি তাঁর কাছ থেকে বিশদে জানতে বা বুঝতে সক্ষম হন।
চতুর্ত্রিংশ পর্ব আগামী রবিবার)
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- 8584063724
৩২ম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন- https://agamikalarab.com/2020/07/08/usage-of-hatha-yoga/