
শ্রী অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকমণ্ডলীর মধ্যে শ্রী অরবিন্দ ও মায়ের জীবনী নিয়ে চর্চা করেন কিংবা শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত পাঠকও রয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র আবেদন যে, ধারাবাহিকটি পড়তে পড়তে কোনোরকম তথ্যভিত্তিক ত্রুটি চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করুন, অথবা লেখার শেষে কমেন্টেও জানাতে পারেন। এছাড়া লেখার নীচে দেওয়া লেখকের ফোন নম্বরে সরাসরি করতে পারেন যোগাযোগ। আমরা ত্রুটি মেরামতে সদা সচেষ্ট। –সম্পাাদক
শ্রীঅরবিন্দের পূর্ণযোগ (পর্ব- ক)
মুকুল কুমার সাহা: এই পর্ব থেকে আমরা শ্রী অরবিন্দের পূর্ণ যোগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব। শ্রী অরবিন্দের যোগের উদ্দেশ্য কী, শ্রী অরবিন্দ নিজে তাঁর বাংলা লেখায় এ ব্যাপারে যেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আমরা আমাদের ৩০তম পর্বে সেটা প্রকাশ করেছি। ৩০ তম পর্বের লিঙ্কটি(শ্রীঅরবিন্দের পূর্ণ যোগের উদ্দেশ্য)খুললেই সকলে দেখতে পাবেন তাঁর যোগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কী বলেছেন শ্রী অরবিন্দ।
সব যোগ সাধনাই অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু শ্রী অরবিন্দের যোগ অতীব কঠিন, এ কথা শ্রী অরবিন্দ নিজেই বলেছেন। তবে তাঁর যোগ সাধনার জন্য যেটা অপরিহার্য সেটা হচ্ছে ঘরোয়া কথায় যাকে বলে ‘ডাক’, ইংরেজিতে বলে Call। তিনি বলেছেন, এই ডাক যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর ভিতরে যত দোষই থাক, তাতে কিছুই যায় আসে না। আবার যদি কেউ হাজার জ্ঞানী ব্যক্তি হয়, হাজার পুণ্য ও তপস্যা থাকে, কিন্তু এই ডাকটি না পেয়ে থাকলে তিনি শ্রীঅরবিন্দের যোগ সাধনার অধিকারী হতে পারবেন না। আবার যদি কেউ মূর্খ হয়, দুর্বল হয়, তার প্রকৃতিতে যাবতীয় ত্রুটি বিচ্যুতি থেকেও থাকে, তবু সে যদি ডাক পেয়ে থাকে, তাহলে সে সকল বাধা বিপত্তি উত্তীর্ণ হয়ে যাবে।
এই ‘ডাক’ জিনিসটি কী? এটা হল মানুষের অন্তরাত্মা বা চৈত্যসত্তার ইচ্ছা বা তার প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের জীবন যতদিন, ততদিন এই অন্তরাত্মা থাকে অন্তরালে। তখন মানুষ চলে শরীর, প্রাণ ও মনের ভিতর দিয়ে, অবশ্যই অন্তরাত্মারই ইচ্ছা অনুসারে, পরোক্ষ ভাবে। জন্ম জন্মান্তরের ক্রমবিকাশের ফলে অন্তরাত্মা বা চৈত্যসত্তা যখন পূর্ণ চেতনাবস্থা প্রাপ্ত হয়, তখন সে সামনে এসে দাঁড়ায়। শরীর, প্রাণ ও মনের ইচ্ছা তখন অন্তরের ইচ্ছা অনুযায়ী চলতে বাধ্য হয়। যদিও বাইরে থেকে মানুষটার পরিবর্তন কিছুই বোঝা যায় না।

অন্তরাত্মা বা চৈত্যসত্তার এই সামর্থ বা শক্তিটা কী? মহাপুরুষদের মতে সেটা হল– সর্বশক্তিমান ভগবানের চিন্ময়ী মহাশক্তির নিজের অংশ। যখন সে পূর্ণ সচেতন হয়ে ওঠে, জন্ম জন্মান্তরের সুখ দুঃখের জীবন পার হয়ে হয়ে একসময়ে সে হয়ে ওঠে প্রকৃতির ঈশ্বর। এইরকম অবস্থায় অন্তরাত্মার যোগ সাধনার অধিকার অর্জিত হয়।
এখন এইরকম অবস্থায় মানুষ কোন যোগ মার্গ অবলম্বন করবেন, তাঁর অন্তর থেকে যেটা ভালো লাগবে, সেটাই ঠিক করে নেবেন তিনি। ঠিক এভাবেই, শ্রীঅরবিন্দের যোগ মার্গ যিনি অবলম্বন করবেন, সেই ডাকটি তিনি তাঁর অন্তর থেকেই পাবেন।
অন্তঃপুরুষের এই অধিকারই একমাত্র অধিকার। মন্ত্র ও দীক্ষা আসলে এই অন্তঃপুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া আর কিছুই নয়। শ্রীঅরবিন্দের সাধনায় তাই অন্য কোনো আচার নিয়মবিধির অনুষ্ঠান নেই। একমাত্র প্রয়োজন চৈত্য পুরুষের চেতনায় জাগ্রত হওয়া, তারই আহ্বান শোনা।
শ্রী অরবিন্দ যে যোগ সাধনা মানুষকে দিয়েছেন, সেটা জগৎকে জীবনকে মানব সমাজকে পরিত্যাগ করে নয়, তাদের সকলকে গ্রহণ করেই। তিনি চেয়েছেন মানুষের সাধারণ জীবন আধ্যাত্মিক সত্যে গঠিত, রূপান্তরিত যেন হয়ে ওঠে। শ্রীঅরবিন্দের সাধনা জগতের বা মানুষের কোনো কিছুকেই বাদ দিয়ে নয়, সমস্তকে স্বীকার করে। তবে সে সমস্তকে ভগবৎমুখী করে তুলতে হবে, ভগবৎ প্রেরণায় অনুপ্রাণিত করতে হবে। বর্তমানে মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করছেন সেটা অজ্ঞানের দ্বারা, অ-ভাগবৎশক্তির প্রেরণার দ্বারা চলা জীবন। মনের প্রাণের শরীরের মিথ্যাকে, অজ্ঞানতাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। অন্তরাত্মার সত্যে নিজেকে, নিজের জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হতে হবে।
(অষ্টত্রিংশ পর্ব আগামী রবিবার)
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- 8584063724
৩৬ তম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন– https://agamikalarab.wordpress.com/2020/09/11/tantra-yoga/