
শ্রী অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকমণ্ডলীর মধ্যে শ্রী অরবিন্দ ও মায়ের জীবনী নিয়ে চর্চা করেন কিংবা শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত পাঠকও রয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র আবেদন যে, ধারাবাহিকটি পড়তে পড়তে কোনোরকম তথ্যভিত্তিক ত্রুটি চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করুন, অথবা লেখার শেষে কমেন্টেও জানাতে পারেন। এছাড়া লেখার নীচে দেওয়া লেখকের ফোন নম্বরে সরাসরি করতে পারেন যোগাযোগ। আমরা ত্রুটি মেরামতে সদা সচেষ্ট। –সম্পাাদক
আমাদের চেতনা নিয়ে কিছু কথা
মুকুল কুমার সাহা: আমরা এখন থেকে শ্রীঅরবিন্দের পূর্ণ যোগ সম্বন্ধে জানতে শুরু করব। আমার মনে হয়, প্রথমেই আমাদের ‘যোগ বা যোগ সাধনা’– এই শব্দগুলোর উপর অকারণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করব। আবার আমরা সকলেই ‘যোগ সাধনার অধিকারী’ এইরকম ভেবে নিয়ে মস্ত ভুল যেন না করে বসি এটাও লক্ষ্য রাখব। আমরা মহাপুরুষদের লেখা আধ্যাত্মিকতার ভাষা ও শব্দগুলো সম্পর্কে বিশেষ ভাবে পরিচিত নই; কারণ, অল্প বয়স থেকে এর চর্চা করার মত বিশেষ সুযোগ আমাদের হয়ে ওঠেনি। তাই এইসব বইপত্রগুলো ধৈর্য ধরে আমাদের পড়ে নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই জাগে না। সেই কারণে আমাদের চেতনায় এইসব ঢুকবে না এইরকম ভেবে নিয়ে এর থেকে আমাদের দূরে থাকা কি ঠিক হবে?
সেই কতদিন আগে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব আমাদের আশীর্বাদ করে গিয়েছেন ‘তোদের চৈতন্য হোক’, এই কথাগুলো বলে। জানি না তিনি তাঁর সন্ন্যাসী এবং গৃহী শিষ্যদের জন্য এবং তাঁর ভক্তদের জন্য, নাকি তিনি সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে এই কথাগুলো বলেছিলেন, আমরা ঠিক জানি না। যদি মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে তাঁর এই আশীর্বাদে এতদিনে আমাদের চেতনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে এই বিশ্বাস করতেই পারি।
এইবার পুজো সংখ্যার বর্তমান পত্রিকায়(বাংলা ১৪২৭, ইংরেজি ২০২০) শ্রদ্ধেয় শঙ্করবাবুর লেখা ‘এক সন্ন্যাসী ও তাঁর সপ্ত জননীর অমৃত কথা’ পড়তে শুরু করেছি। আমার মতে সাধারণ গ্রাম্য ভাষায় বলতে গেলে লেখক স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃতির হাঁড়ির খবর দিয়েছেন। এই লেখাটি পড়লে বুঝতে অসুবিধা হবে না কেন স্বামী বিবেকানন্দ একজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হয়েও তাঁর দেহরক্ষার পর সূক্ষ্ম শরীরে জেলে শ্রীঅরবিন্দকে দেখা দিয়েছিলেন। অসহায় দুর্বল মানবজাতিকে বর্তমান অবস্থা থেকে এক ধাপ উচ্চে তুলে ধরতে শ্রীঅরবিন্দের সাধনার বিষয় অতিমানস শক্তি চৈতন্য কী এবং কেমন, তাঁকে তা বিশদে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন; যে কথা নিজেই বলেছেন শ্রীঅরবিন্দ।

আবার স্বামী বিবেকানন্দ সারদা মা সম্পর্কে এক চিঠিতে লিখেছিলেন ‘মা ঠাকুরন যে কী বস্তু বুঝতে পারি নি…’। স্বামী বিবেকানন্দ যাঁকে বুঝতে পারতেন না, আমরা তাকে বুঝতে পারব এই আশা অবশ্যই আমরা করি না। কিন্তু তিনি মানবদেহে আমাদের পৃথিবীতে এসেছিলেন, শ্রী রামকৃষ্ণ দেব যাঁকে বলেছেন ‘মহা সরস্বতী’। সুতরাং, তাঁর মানব শরীরের জন্মগ্রহণে মানবজাতির চেতনা যথেষ্ট বাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক।
পন্ডিচেরী আশ্রমের দিব্যজননী শ্রীমা, শ্রীঅরবিন্দের সাধনার অতিমানস শক্তিচৈতন্যকে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়েছেন স্থায়ী ভাবে। শ্রীমা যখন পৃথিবীতে শ্বাসগ্রহণ করেছেন তখন আমাদের মানবজাতির অনেক মানুষ জন্মগ্রহণ করে এখনো পৃথিবীতে শ্বাসগ্রহণ করছেন। তাই আমাদের বিশ্বাস এই সময়ে আমাদের চেতনা একেবারেই উন্নত নয়, এইরকম ভাবা বিশেষ সমীচীন নয়।
আমরা শ্রীঅরবিন্দের যোগ করতে না পারি তাঁর পথ ধরে উচ্চ জীবন পাওয়ার চেষ্টা তো করতে পারব। সুতরাং মাভৈ আমরা চেষ্টা শুরু করি। প্রথমেই আমরা শ্রীঅরবিন্দের ‘The Synthesis of yoga‘ গ্রন্থের অনুবাদ শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘যোগ সমন্বয়’ বইটি থেকেই শুরু করি। এই বইটিতে শ্রীঅরবিন্দ যোগ সম্বন্ধে পুরাতন যোগের ভালোমন্দের খুঁটিনাটি বিষয়ে এবং তাঁর পূর্ণ যোগের পূর্ণ সিদ্ধি সম্পর্কে আমাদের বিশদে জানিয়েছেন। আমার চেতনায় শ্রীঅরবিন্দের লেখার সব কথার মর্ম বোঝা সম্ভবপর নয়। যতটুকু বুঝতে পেরেছি ততটুকুই সহজসরল ভাবে বলতে চেষ্টা করব। এই লেখা পড়তে পড়তে যাঁদের অন্তরে অতৃপ্তি থেকে যাবে তাঁরা অবশ্যই মূল বইদুটি পড়ে নেবেন এই অনুরোধ রইল।
(ঊনত্রিংশ পর্ব আগামী রবিবার)
লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- 8584063724
৩৭ তম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন– https://agamikalarab.wordpress.com/2020/09/22/purna-yoga-of-shree-aurobinda/