ধারাবাহিক রচনা: আমাদের শ্রী অরবিন্দ(পর্ব-৩২)

শ্রী অরবিন্দ ও শ্রীমায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকমণ্ডলীর মধ্যে শ্রী অরবিন্দ ও মায়ের জীবনী নিয়ে চর্চা করেন কিংবা শ্রী অরবিন্দ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত পাঠকও রয়েছেন নিশ্চয়ই। তাঁদের প্রতি আমাদের বিনম্র আবেদন যে, ধারাবাহিকটি পড়তে পড়তে কোনোরকম তথ্যভিত্তিক ত্রুটি চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে তৎক্ষণাৎ আমাদের দপ্তরে যোগাযোগ করুন, অথবা লেখার শেষে
কমেন্টেও জানাতে পারেন। এছাড়া লেখার নীচে দেওয়া লেখকের ফোন নম্বরে সরাসরি করতে পারেন যোগাযোগ। আমরা ত্রুটি মেরামতে সদা সচেষ্ট। –সম্পাদক

হঠ যোগের প্রয়োগ সম্পর্কে

মুকুল কুমার সাহা: আগের পর্বে আলোচনা করেছিলাম, হঠ যোগের স্বল্প ক্রিয়ার মাধ্যমে(আসন ও প্রাণায়াম) বর্তমানে আমরা অনেকেই শরীরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি। হঠ যোগীরা যে উদ্দেশ্যে আসন ও প্রাণায়াম রপ্ত করতেন সেটা হচ্ছে আসনের দ্বারা শরীরকে অচঞ্চল স্থির হতে শিক্ষা দেওয়া হত। আসনের নিশ্চলতার উদ্দেশ্য হল প্রকৃতি থেকে প্রাণশক্তি বা জীবনীশক্তি আমাদের শরীরের উপর যে পরিমানে এসে পড়ছে তাকে ক্ষয় ও অপচয় না করে শরীরকে শান্ত ও নিশ্চল রেখে জীবনীশক্তিকে ধারণ করতে বাধ্য করা। এ ছাড়াও শরীরকে ব্যাধিমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ বিশেষ আসন প্রক্রিয়া তাঁরা অবলম্বন করতেন; কারণ বিশেষ বিশেষ আসন বিশেষ বিশেষ ব্যাধিনাশের পক্ষে কার্যকরী হয়। হঠযোগীরা তারপর নানা প্রকার জটিল প্রক্রিয়ার দ্বারা শরীর থেকে সকল ময়লা দূর করে দিতেন, যাতে প্রাণশক্তি শরীরের যে কোনো স্থানে অবাধে যাতায়াত করতে সক্ষম হয়।

প্রাণায়াম অর্থ প্রাণশক্তিকে, প্রাণ বায়ুকে সংযত স্ববশীভূত করা। এই কাজ করা হয় শ্বাস প্রশ্বাসের নানাবিধ নিয়ন্ত্রণের দ্বারা, নিঃশ্বাসের (রেচক) ও প্রশ্বাসের (পূরক) সমতা থেকে আরম্ভ করে উভয়ের ছন্দময় নিয়ন্ত্রণ আর এসবের মাঝে থাকে শ্বাসের অন্তর্ধারণ(কুম্ভক)।
(বাইরের বায়ু আকর্ষণ করে ভিতরের অংশে পূরণ করাকে পূরক, ভিতরের বায়ুকে অভ্যন্তরে ধারণ করাকে কুম্ভক এবং ওই ধৃত বায়ুকে বাইরে নিঃসরণ করাকে রেচক বলে।) এসব ক্রিয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে নাড়িতন্ত্রকে(স্নায়ু মণ্ডলীকে) শুদ্ধ করা, সকল নাড়ির(স্নায়ুর) মধ্য দিয়ে প্রাণশক্তিকে সঞ্চালন করা যেন কোনো বাধা বিশৃঙ্খলা বা অনাচার না ঘটে; ফলে দেহমধ্যস্থ পুরুষের মন ও সঙ্কল্প আর আগের মত দেহের বা প্রাণের সব সঙ্কীর্ণতার অধীন না থেকে মুক্ত অবাধ যেন হতে পারে। আসন সিদ্ধ হলে, সেই সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাস ও কুম্ভকের ক্রিয়া শুদ্ধ হলে প্রাণশক্তিকে শরীরের যে কোনো স্থানে, যে কোনো অংশে চালনা করা সম্ভব হয়। শরীর অনেক বিশৃংখলা ও অনাচার থেকে মুক্ত হয় আসন সিদ্ধ হলে এবং সম্পূর্ণভাবে সিদ্ধ যন্ত্র হয়ে ওঠে আসন ও প্রাণায়ামের যুক্ত ক্রিয়ার দ্বারা। তখন শরীরে শীঘ্রই ক্লান্ত হওয়ার প্রবণতা দূর হয়, স্বাস্থ্য-সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় প্রভূত পরিমানে এবং ক্ষয় জরা ও মৃত্যু প্রবনতাও স্তব্ধ হয়। এমন কি সাধারণ আয়ুসীমার ঊর্ধ্বে পরিণত বয়সেও হঠযোগী দেহের মধ্যে প্রাণের অক্ষুন্ন বীর্য, স্বাস্থ্য ও যৌবন রক্ষা করতে পারেন। হঠযোগের বিভিন্ন সিদ্ধি অর্থাৎ গরিমা, মহিমা, অনিমা, লঘিমা প্রভৃতির সামর্থ্য লাভ করা যায়।

শরীর ও মন ও চিৎপুরুষের মধ্যে এবং স্থূল ও সূক্ষ্ম শরীরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করা হঠযোগীর আয়ত্বের মধ্যে এসে যায়।

হঠযোগীরা যে বিরাট জটিল প্রক্রিয়াদিতে মগ্ন থাকেন, তাঁদের যে সময় ব্যয় করতে হয় এসব সাধনার প্রক্রিয়ায়, বাধ্য হয়েই তাঁদের জগতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়।

শুরুতেই যেটা আলোচনা করছিলাম, হঠযোগের স্বল্প ক্রিয়ার (আসন ও প্রাণায়ামের) দ্বারা আমাদের শরীরকে নীরোগ রাখতে যে আসন ও প্রাণায়াম আমরা অভ্যাস করব সেগুলো যদি কোনো সিদ্ধ যোগী ব্যবস্থা করেন তা হলে ভালো হয়, কারণ তাঁরাই ভালো মত বুঝবেন সর্ব সাধারণের পক্ষে কোন কোন আসন কোন কোন প্রাণায়াম উপযুক্ত হতে পারে।

(ত্রিত্রিংশ পর্ব আগামী রবিবার)

লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- 8584063724

৩১ম পর্বটি পড়তে ক্লিক করুন- https://agamikalarab.com/2020/06/27/what-is-hatha-yoga/

One thought on “ধারাবাহিক রচনা: আমাদের শ্রী অরবিন্দ(পর্ব-৩২)

Leave a comment